মানববসতির আশেপাশে সহসাই পাতি চড়ুইয়ের দেখা মেলে। শহরে বা গ্রামে, মানববসতির কাছাকাছি যেকোন পরিবেশে এরা নিজেদের স্বচ্ছন্দে মানিয়ে নিতে পারে। প্রতিকূল পরিবেশে খাপখাইয়ে নেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা থাকলেও সাধারণত জনহীন বনভূমি, তৃণভূমি ও মরুভূমিতে এরা বসবাস করে না। শস্যদানা ও আগাছার বীজ এর প্রধান খাদ্য হলেও সুযোগ পেলে পোকামাকড়, উচ্ছিষ্ট ও নানান রকমের খাবার পেলে ছাড়ে না। বিড়াল, বাজ, প্যাঁচাসহ বিভিন্ন প্রজাতির শিকারী পাখি এবং স্তন্যপায়ী এর প্রধান শত্রু।
চড়ুইয়ের প্রাচুর্য ও মানব-সহচার্যের কারণে বিভিন্ন লেখালেখি ও অন্যান্য মাধ্যমে এর উপস্থিতি প্রকট। কোথাও কোথাও এটি ক্ষেতখামারের বালাই হিসেবে চিহ্নিত। তবে এদের সফলভাবে নির্মূল করা বেশ কষ্টসাধ্য। খাদ্য ও পোষা পাখি হিসেবে এর মোটামুটি কদর রয়েছে। পাতি চড়ুই কামনা, যৌনক্ষমতা, যৌনবিকৃতি ও অতি-সাধারণতার প্রতীক।
বিবরণ
আকৃতি ও পরিমাপ
পাতি চড়ুই সাধারণত দৈর্ঘ্যে মাত্র ১৬ সেমি (৬.৩ ইঞ্চি) হয়। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ ১৪ থেকে ১৮ সেমি (৫.৫ থেকে ৭.১ ইঞ্চি) পর্যন্ত হতে পারে।[৬] এটি আকৃতিতে বেশ পরিণত এবং মাথা গোলাকার। ঠোঁট মজবুত ও কোণকাকৃতির। ঠোঁটের দৈর্ঘ্য ১.১–১.৫ সেমি (০.৪৩–০.৫৯ ইঞ্চি) এবং বীজ ও শস্যদানা খাওয়ার উপযোগী। লেজ খাটো, দৈর্ঘ্যে ৫.২–৬.৫ সেমি (২.০–২.৬ ইঞ্চি)। ডানার দৈর্ঘ্য ৬.৭–৮.৯ সেমি (২.৬–৩.৫ ইঞ্চি) ও পা ১.৬–২.৫ সেমি (০.৬৩–০.৯৮ ইঞ্চি)।
পাতি চড়ুইয়ের ওজন কমবেশি ২৪–৩৯.৫ গ্রাম (০.৮৫–১.৩৯ আউন্স)। স্ত্রী চড়ুই পুরুষ চড়ুইয়ের তুলনায় একটু খাটো। ইউরোপে স্ত্রী-পুরুষ দু'জনের গড় ওজন প্রায় ২৪–৩৯.৫ গ্রাম (০.৮৫–১.৩৯ আউন্স), এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় উপপ্রজাতির ক্ষেত্রে গড় ওজন প্রায় ৩০ গ্রাম (১.১ আউন্স)। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিরা আকারে ছোট, পুরুষ চড়ুই শীতকালে বড় ও স্ত্রী চড়ুই প্রজনন মৌসুমে পুরুষ চড়ুইয়ের তুলনায় বেশ বড়সড় হয়ে ওঠে। সম্পূর্ণ প্রজাতি, এমনকি কোন কোন উপপ্রজাতির বেলায় অধিক উচ্চতার ও অধিক শীতপ্রধান দেশের চড়ুইরা বার্গমানের নীতি অনুসারে আকারে ছোটখাটো হয়।
দেহবর্ণ
প্রজননকালীন (বামে) ও অপ্রজননকালীন (ডানে) পুরুষ চড়ুই
পাতি চড়ুইয়ের দেহে প্রধানত ধূসর ও বাদামি রঙের বিচিত্র সব প্রকরণ লক্ষ্য করা যায়। স্ত্রী ও পুরুষ পাখিতে উল্লেখযোগ্য যৌন দ্বিরূপতা দেখা যায়: স্ত্রী পাখির দেহতল ও উপরিভাগ মূলত মেটেরঙা এবং পুরুষ পাখির মাথার কাছে গাঢ় দাগ থাকে, দেহের উপরিতল লালচে ও দেহতল ধূসর।পুরুষ চড়ুইয়ের ঠোঁটের গোড়া থেকে শুরু করে মাথার চাঁদি পর্যন্ত ধূসর। অধিকাংশ উপপ্রজাতিতে চাঁদির দুই পাশে বাদামি ছোপ দেখা যায়। ঠোঁটের চারপাশ, থুতনি, চোখের চারপাশের কিয়দংশ, চোখের কোণ এবং ঠোঁট ও চোখের মাঝখানের অংশ কালো। ভুরু ও চাঁদির মাঝখানে একটি সাদা সরু দাগ থাকে এবং ঠিক চোখের পেছনে একটি ছোট সাদা ছোপ দেখা যায়। দেহতল হালকা ধূসর বা সাদাটে। গাল, কান-ঢাকনি ও ঘাড়ের গোড়াও একই রঙের। পিঠের উপরের দিকটা বাদামি, তাতে মোটা মোটা কালো দাগ থাকে। পিঠের নিচ, কোমর ও লেজের গোড়া ধূসরাভ-বাদামি।[১৩]
খাদ্যাভ্যাস
এদের খাদ্যতালিকায় কীটপতঙ্গ থাকে। গাছের ডালে বসে পোকা খুঁজে খুঁজে খেতে এরা অভ্যস্ত। খাদ্যান্বেষণের এই পদ্ধতিকে গ্লিনিং বলা হয়।
Post a Comment